শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৮ অপরাহ্ন
জিটিবি নিউজ টুয়েন্টিফোর : রাজধানী ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জমুখী ৩০০ ফুট সড়কে শেষ প্রান্ত থেকে বাম সড়ক ধরে যেতে চোখে পড়বে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার স্থায়ী ঠিকানা। জিন্দাপার্কমুখী সড়কের ডান পাশে এই বাণিজ্য মেলার অবস্থান। পূর্বাচলের ৪ নম্বর সেক্টরে ২০ একর জায়গাজুড়ে গড়ে উঠছে অত্যন্ত সাজানো-গোছানো প্রদর্শনী স্থান। দর্শনীয় ডিজাইনে নির্মিত হচ্ছে এই প্রদর্শনীকেন্দ্রটি।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্রে জানা যায়, চীনা সরকারের অনুদানে ‘বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার’ নামে এই প্রদর্শনীকেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে। পুরো অর্থ চীনা সরকার দেবে না। প্রদর্শনীকেন্দ্রটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান চায়না এস্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন লিমিটেড।
প্রতিবছর রাজধানীর শেরে বাংলানগরে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার আয়োজন করা হয়। দীর্ঘ সময় ধরেই এখানেই চলেছে বাণিজ্য মেলা। তবে কলেবর বাড়লে স্থানের সংকুলান হচ্ছে না। অস্থায়ী জায়গায় মেলা আয়োজনে বিশাল অঙ্কের ব্যয় হয়। আবার প্রয়োজনের তুলনায় জায়গা না থাকায় ও মানুষের আগ্রহের কারণে মেলা চলাকালীন ওই এলাকায় তীব্র ভোগান্তিতে পড়তে হয় রাজধানীবাসীকে।
রাজধানীর ওপর বাড়তি চাপ কমাতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা রাজধানীর অদূরে পূর্বাচলে নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এটি নির্মিত হলে স্থায়ী অবকাঠামোয় প্রতিবছর অপচয়ও কমবে। যদিও পরিকল্পনার শুরুতে তেজগাঁও পুরনো বিমানবন্দর এলাকায় বাণিজ্য মেলা সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু পর্যাপ্ত জায়গা না পাওয়ায় সেটি পূর্বাচলে নেওয়া হয়।
জানা যায়, ২০০৯ সালে প্রকল্প নেওয়া হলেও জমিসংক্রান্ত জটিলতায় কয়েক দফা পিছিয়ে ২০১৫ সালের জুলাই মাসে ‘বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার’-এর নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০১৮ সালে এই নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সেটা সম্ভব হয়নি। তবে আগামী ২০২০ সালের মধ্যে প্রদর্শনীকেন্দ্রটির নির্মাণকাজ শেষ হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। আর এই সময়ে সব কাজ সম্পন্ন হলে ২০২১ সালে বাণিজ্য মেলা আয়োজন সম্ভব বলে আশা প্রকাশ করছেন তাঁরা।
স্থায়ী বাণিজ্য মেলা কেন্দ্র নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৩০৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। যদিও প্রকল্পের শুরুতে মূল ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৭৫ কোটি টাকা। সেখান থেকে বাড়িয়ে ৭৯৬ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। পরবর্তী সময়ে আরো ৫০৭ কোটি টাকা ব্যয় যুক্ত করা হয়। তবে ব্যয় বাড়ায় প্রদর্শনীকেন্দ্রটির নকশায় নতুন নতুন কাজও যুক্ত করা হয়।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, পূর্বাচলে বাণিজ্য মেলা স্থায়ী ঠিকানায় বিশাল অঞ্চলজুড়ে চলছে নির্মাণযজ্ঞ। চারপাশে বেষ্টনী দেওয়া কেন্দ্রের পুরো অংশেই চলছে নির্মাণকাজ। মূল কাঠামোর চারপাশে বাইরের অংশে লাল ইটের গাঁথুনি। বাউন্ডারির পিলারে দেওয়া হচ্ছে রঙের প্রলেপ। প্রদর্শনীকেন্দ্রের ভেতরের অংশেও চলছে ডিজাইনের কাজ। রাস্তার পাশ ঘেঁষে অংশে চলছে বৈদ্যুতিক ও পাওয়ার সরবরাহের কাজ। প্রদর্শনীকেন্দ্রের বাইরের অংশে ফাঁকা জায়গার উন্নয়নকাজ করছে শ্রমিকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খুব জোরেশোরে বাণিজ্য মেলা প্রদর্শনীর কাজ চলছে। কারো দম ফেলার সময় নেই। দ্রুত নির্মাণকাজ শেষ করতে হবে বিধায় এমন তোড়জোড় চলছে। প্রদর্শনীকেন্দ্রের ভেতরের অংশের কাজ প্রায় শেষের দিকে। পূর্বাচলে প্রদর্শনীকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্প নির্মাণ সম্পন্ন করতে যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল সেই সময়ে করা সম্ভব হয়নি। কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে নির্মাণের চেষ্টা চলছে। নির্মাণকাজ এখন অনেকটা শেষ প্রান্তে।’
বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার-এর মূল নকশা প্রণয়ন করেছে চীনের বেইজিং ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেকচারাল ডিজাইন (বিআইএডি)। নকশা অনুযায়ী এক্সিবিশন সেন্টারে রাখা হচ্ছে একসঙ্গে এক হাজার ৫০০ কার পার্কিং সিস্টেম। সেন্টারে থাকবে আট শতাধিক বুথ, হলরুম, আন্তর্জাতিক মানের সম্মেলন কেন্দ্র, বাণিজ্য তথ্যকেন্দ্র, সভাকক্ষ, প্রেস সেন্টার, সার্ভিস রুম ও বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন।